• Thursday, June 1, 2023

ধরুন আজ রাতে আপনার বিজনেস পেইজের সবকিছু গুছিয়ে, স্টকে থাকা প্রোডাক্টস এর মার্কেটিং প্ল্যান তৈরী করে সেল পোস্টগুলোতে বাজেট সেট করে ঘুমোতে গেলেন। 

 

সকালে উঠে দেখলেন যে আপনার এড একাউন্ট ডিজেবলড অথবা আপনার কোন ভুলের কারণে ফেসবুক পেইজ এডভার্টাইজ রেস্ট্রিকটেড করা হয়েছে। 

 

আপনি যদি শুধুমাত্র ফেসবুক নির্ভরশীল হয়ে থাকেন এবং এর বাইরে আপনার কোন অবস্থান তৈরী না থাকে তবে সেই অবস্থায় আপনার বিজনেস অফ করে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিজনেস করছেন। এর মধ্যে প্রায় সিংহভাগ মানুষই ফেসবুক পেইজের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বর্তমানে ফেসবুক এড কোষ্টিং, এড একাউন্ট ডিজেবলড সহ নানান সমস্যায় বেশীরভাগ উদ্যোক্তাদের বিজনেস বন্ধ হয়ে আছে, হয়তো আপনিও তাদের মধ্যে একজন হয়েই এই লেখাটি পড়ছেন।

 

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় বিরাট একটি অংশ অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। কিন্তু একজন সফল উদ্যোক্তা হতে বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন হয়। যেমন একটি পরিকল্পনা, ব্যবসার উপকরণ, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি। পরিকল্পনা আর ব্যবসার উপকরণ যাইই থাকুক না কেন মার্কেটিং এর ব্যাপার আস্লেই বেশীরভাগ উদ্যোক্তা শুধুমাত্র ফেসবুক বুষ্টিংকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এরফলে তৈরী হয় ফেসবুক নির্ভরশীলতা।

 

শুধুমাত্র একটি এডভার্টাইজিং প্লাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়লে যেকোন সময় আপনার ব্যবসার জন্য কিছু বড় হুমকি আসতে পারে। চলুন জেনে নিই সেগুলো কিরকম হতে পারে। এছাড়া ওয়েবসাইট না থাকার ফলে আপনি অনেক বড় কিছু সুযোগ হারাচ্ছে যা আপনার বিজনেসকে আরো গতিশীল করতে পারে।

 

শুধুমাত্র ফেসুবক নির্ভরশীল হলে যে ধরনের সমস্যাগুলো তৈরী হতে পারেঃ

১) হুট করে এডভার্টাজিং রেস্ট্রিকশন।

কোন কারণে আপনার পেইজে যদি এডভার্টাইজিং রেস্ট্রিকটেড হয় বা পলিসি ভায়োলেশন এর কারণ দেখিয়ে এড একাউন্ট ডিজেবল করা হয় তবে আপনার মার্কেটিং পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্যাগুলো পুনরায় ফিক্স হচ্ছে ততক্ষণ আপনার বিজনেস ধীর হয়ে যাবে। আর যদি পার্মানেন্টলি রেস্ট্রিকশন আসে তবে বিজনেস পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া অর্গানিকভাবে যতটুকু সেল করার পেইজ আনপাবলিশ হলে সেটিরও সুযোগ থাকবে না। ফলাফল? আপনার দীর্ঘদিনের শ্রম ও টাকার পাশাপাশি বিজনেসটি হারালেন ।

 

২) সম্পুর্ণ ফ্রি পটেনশিয়াল মার্কেটপ্লেস হারাচ্ছেন।

ফেসবুকে আমরা যদি কোন প্রোডাক্ট এর এড দেই তবে এর মাঝে কারা পটেনশিয়াল ক্রেতা তা বের করা যায় না। হয়তো আপনার এই এডটি অনেক মানুষের কাছে যাওয়ার পর সম্ভাব্য একজন ক্রেতা আপনাকে মেসেজ করবে। কিন্তু অন্যক্ষেত্রে বর্তমানে আমাদের যখনই যা প্রয়োজন হয় আমরা সেটি গুগলে সার্চ করি। আপনি যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ করেন তখন অনেক ধরনের সোর্স আপনার সামনে আসে। হয়তো আপনি একটি স্মার্টফোন কিনতে আগ্রহী এবং সেজন্য আপনি Buy mobile in low price দিয়ে গুগলে সার্চ করলেন। 

 

সার্চ করামাত্রই গুগল আপনাকে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট দেখালো যেমন বিডিস্টল, দারাজ, ইভ্যালী ইত্যাদি। আপনি যখন মোবাইল কেনার জন্য গুগলে সার্চ করলেন তখন আপনি একজন পটেনশিয়াল ক্রেতা হিসেবেই একটি রিজনেবল প্রোডাক্টস খোঁজ করছেন। আর আপনার কাছে যেসব ওয়েবসাইট আসছে সেগুলো একজন পটেনশিয়াল ক্রেতা পাচ্ছে। আর সঠিকভাবে এসইও করার ফলে এটি তারা একদমই ফ্রিতে পাচ্ছে যেখানে ফেসবুকের মতো আপনাকে সমানে খরচ করতে হচ্ছে। যদিও আপনি চাইলে সেল বুষ্ট করতে গুগলেও কম খরচে মার্কেটিং করতে পারেন।

 

৩) ব্যাকআপ ক্ষেত্র মিসিং।

কোন কারণে আপনার ফেসবুক পেইজ যদি আনপাবলিশড বা রেস্ট্রিকটেড হয়ে যায় তবে তার সাথে বিজনেসও বন্ধ হচ্ছে। এখন আপনার যদি কোন ওয়েবসাইট করা থাকে তবে ফেসুবক বা ইন্সট্রাগ্রাম পেইজ বন্ধ হলেও আপনার কাস্টোমাররা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই কম্যুনিকেট করতে পারছে। এতে করে আপনার সেল ভলিয়মেও এটি খুব বেশী প্রভাব ফেলছে না। ঠিক একইভাবে কোন কারণে আপনার ওয়েবসাইট ম্যানটেইন্যন্স এ থাকলে বা সার্ভার ডাউন হলে আপনার কাস্টোমাররা সোশ্যাল মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। ওয়েবসাইট না থাকলে আপনি এই ব্যাকআপ ক্ষেত্রটি হারাচ্ছেন।

 

৪) গুছিয়ে উপস্থাপনের স্বাধীনতা।

যারা মাল্টিপ্রোডাক্টস বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য সবগুলো প্রোডাক্টস বা সার্ভিস গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য ওয়েবসাইট একটি বড় ভুমিকা রাখে। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার সকল ধরনের প্রোডাক্টস বা সার্ভিস মাত্র এক লাইনের এড্রেসে যুক্ত করে দিলেন এবং এতে আপনার ক্রেতা সহজেই তার প্রয়োজনীয় পণ্যটি খুঁজে অর্ডার করতে পারলো। এতে করে কোন ক্রেতা একটি প্রোডাক্ট এর এড দেখে আগ্রহী হলেও পরবর্তীতে সে অন্যান প্রোডাক্টেও আগ্রহী হতে পারে এবং এতে আপনার সেল ভলিয়ম বাড়ছে। এছাড়া অর্ডার অটোমেশন, পেমেন্ট কনফার্মেশনসহ এডভান্স ফিচার্সগুলো ইন্ট্রিগ্রেট করার মাধ্যমে আপনার ক্রেতারাও কোন কিছু কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।

 

শুধুমাত্র একটি ই-কমার্স বা অনলাইট স্টোরই নয়, আপনার কোম্পানী বিজেনেসের জন্য পোর্টফলিও, কোম্পানী ওভারভিউসহ সকল তথ্য রাখার জন্যও ওয়েবসাইট গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে। 

 

শুধুমাত্র ওয়েবসাইট তৈরী করবেন বা ওয়েবসাইট থাকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অবস্থান রাখবেন না ব্যাপারটি এমন নয়, মুলত দুটি মাধ্যমই একে অন্যের পরিপুরক। আপনার বিজনেস গ্রো করার জন্য আপনি সব মাধ্যমেরই যথাযথ ব্যবহার করতে পারছেন।

 

আর যদি আপনি বড় কোন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে মুল ক্ষেত্র ওয়েবসাইটকেন্দ্রিক করে সোশ্যাল মাধ্যমগুলো ব্যানার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে অন্যান সকল মাধ্যমে প্রচারণা থাকলেও ক্রেতা শুধুমাত্র একটি মাধ্যম থেকে কেনাকাটা করবে।